এখন আর ছয় ঋতুর দেশ নাই বাংলাদেশ। সারাবছর এখন আমি দেখি তিন ঋতু—গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত।
আমরাই মনে হয় সর্বশেষ প্রজন্ম, যারা ছয়টি ঋতুর আবহাওয়া গায়ে মেখেছি। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখে বড় হয়েছি। আহা কে জানতো, একদিন ঐসব প্রকৃতির সৌন্দর্য হারিয়ে যাবে। জানলে হয়তো কখনোই বড় হতে চাইতাম না...
শরৎকালে দেখতাম নীল আকাশে উড়ে যাচ্ছে তুলোর মতো সাদা মেঘ। রাস্তার পাশ ঘেঁষে এবং নদীর কিনারাগুলোতে কাশফুল উঁকি দিতো। আমার বাড়িটা নদীর খুব কাছে। নদীর পাড়েই বিশাল মাঠ। আমাদের সময় সেই মাঠের তিন ভাগের পুরা এক ভাগে কাশফুল ফুটে থাকতো। যে কারণে আমাদের খেলার একটা বাড়তি আকর্ষণ যোগ হতো। এখন সেসব নাই...
একটা সময় সারাদেশে দুর্ভিক্ষ ছিলো। বিশেষ করে আশ্বিন-কার্তিক মাসে মানুষের প্রচন্ড অভাব যেতো। এরপর যখন আমন ধান ঘরে তুলতো, তখন চারদিক কেমন উৎসবমুখর হয়ে উঠতো, সবাই সাধ্যের মধ্যে একটু ব্যয়বহূল হতে চাইতো। লাঠি খেলা হতো। পালাগান হতো। এখন বুঝি, ঐসময়টাকেই বলা হতো হেমন্ত কাল ।
ঋতুর রাজা বসন্ত। তবে বর্তমানে তা শুধু শাহবাগেই অনুধাবন করা যায়। গ্রামে আমের মুকুল দেখে আন্দাজ করা যায়, বসন্ত বোধয় এসে গেছে। তবে আমাদের সময় বসন্তকালে প্রকৃতির মিছিল নেমে যেতো। গাছগুলোর শীতের খোলস থেকে বেড়িয়ে, নতুন পাতা গজাতো। সবকিছুর যেনো নতুন জীবন পাওয়া। বসন্তের সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে ‘বাতাস’ এইসময় যে কেউ গায়ে বাতাস লাগিয়ে বলে বলে দিতে পারবে, এখন বসন্ত চলছে...
সেইসব দিনগুলো গেলো কই? সেই প্রকৃতির রূপ? সামনে হয়তো আরও খারাপ সময় আসছে, এখন গাছ না কাটার জন্যও আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। যেনো গাছই আমাদের শত্রু। খুব যত্ন করে আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি ধ্বংস করে চলেছি। অথচ চাইলেই আমরা শিক্ষা নিতে পারি নির্মল স্নিগ্ধ এই প্রকৃতির কাছ থেকে।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যখনি যে কয়টা সম্ভব হবে গাছ লাগাবো।
photo: collected from google |
Comments
Post a Comment