Skip to main content

দ্য গ্রেট উত্তম কুমার



[ক]

প্রথমবার কোন সিনেমা সম্পর্কে লিখছি। সিনেমার নাম ‘এন্টনী ফিরিঙ্গী’ । মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহানায়ক উত্তম কুমার এবং তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন তানুজা । রচনা ও পরিচালনা সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায় । 

সিনেমার শুরুতেই বুঝা যায় উত্তম কুমারের মানে এন্টনীর বাবা ইউরোপীয়ান এবং তার মা বাঙ্গালী। এন্টনীরা দুই ভাই। এন্টনী এবং কিলি এন্টনী। এন্টনী [উত্তম কুমার] মনে প্রাণে বাঙ্গালী এবং তার ভাই মনে প্রাণে ইউরোপীয়ান। 

সিনেমার শুরুতেই সাইট নায়িকা [যার সাথে প্রেম হয় কিন্তু বিয়ে হয় না] তার জন্মদিন পার্টিতে এন্টনীকে গ্রামের মানুষদের সাথে মিশতে নিষেধ করে এবং তার মা বাঙ্গালী বলে অপমান করে। তাই এন্টনী সাইট নায়িকাকে অপমান করে পার্টি থেকে বেড়িয়ে বাসায় চলে আসে। 

পার্টি থেকে চলে আসার কারণে এন্টনীর ভাই কিলি এন্টনী বাসায় ফিরে মাথা গরম করে, এবং নিজের মা’কেও অপমান করে। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে এন্টনীর মা মারা যায়। যদিও তিনি আগে থেকেও অসুস্থ ছিলো...

মায়ের মৃত্যুর পর কিলি এন্টনী তার ভুল বুঝতে পেরে, ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ নিয়ে তিনি পর্তুগাল চলে যায় । 

তার পরের সিন-টা আমার কাছে আশ্চর্য লেগেছে। মায়ের মৃত্যুর পর পরই ছেলে এন্টনী মনোরঞ্জন পেতে চলে যায় বাঈজীর গান শুনতে। মন খারাপ থাকলে মানুষ গান শুনে স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি বাঈজীর প্রেমেও পরে যান। 

মায়ের মৃত্যু আর বাঈজীর প্রেমে নায়ক এন্টনী পুরাই আউলা হয়ে যান এবং নিজের অঢেল সম্পত্তি মানুষকে দিয়ে ছন্নছাড়া জীবন শুরু করে। মা মরার শোক ভুলে এন্টনী লুকিয়ে লুকিয়ে বাঈজীর গান শুনে মুখস্থ করা শুরু করে, বিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য...

এরপর একদিন এক আসরে [বর্তমানে যাকে আমরা লাইভ শো বলি] নামকরা একজন গায়িকাকে চ্যালেঞ্জ করে এন্টনী, বাঈজীর সেই মুখস্থ করা গানের কোন সত্বাধিকারী না দিয়ে, গেয়ে অনেক নাম করে। এবং বাঈজী সেটা শুনে প্রিন্স মাহমুদের মতো ফেইসবুকে স্ট্যাটাস না দিয়ে, বরং এন্টনীকে নিজ কামরায় ডেকে আনেন। এনে নিজের জীবনের নিষিদ্ধ ইতিহাস খুলে বলেন এবং জড়িয়ে ধরে প্রেমে পরে যান, বিয়ে করেন। 

মোস্ট অফ দ্য টপিক। এন্টনীর প্রেমিকার নিষিদ্ধ ইতিহাস শুনেই আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, এই নায়িকা সিনেমার শেষে মারা যাবে। কারণ কলঙ্কের দাঁগ থাকা নায়িকারা লাস্টিং করে না...

যাই হোক। নিজের সব সম্পত্তি মানুষকে দিয়ে এন্টনী নিজের বউকে নিয়ে উঠেন ছোট্ট কুড়ে ঘরে। এদিকে বউকে ঘরে এনেও এন্টনীর কোন সুবুদ্ধি হয় না। সে তার বাউণ্ডুলে জীবনযাপন চালিয়ে যেতে থাকে। এদিকে তার বউ নিজের গয়না বন্ধক রেখে সংসার চালাতে থাকে!

এরপর একদিন এন্টনী বাড়িতে না থাকায়, বাড়ি ফাঁকা পেয়ে এন্টনীর বউয়ের সেই পুরনো নিষিদ্ধ ইতিহাস ফিরে আসে দুষ্টুকর্ম করার জন্য। এবং এন্টনীর বউ সেটা, ভোঁতা চাকু দিয়ে, শক্ত হাতে মোকাবিলা করে তাড়িয়ে দেয়। এরপর এন্টনী রাতকরে বাড়ি ফিরলে অপদার্থ বলে তাকে প্রচন্ড বোকে দেয়। এবং ত্রিশ সেকেন্ড পর নিজেই ক্ষমা চেয়ে নেয়। আমি তখন মনে মনে বলছিলাম—খাবিনা যখন মাখলি কেন ? 

এরপরেরদিন এন্টনীর বোখাটে বন্ধুদের থেকে বিখ্যাত গায়ক ভোলা ময়রার গল্প শুনে; এন্টনীয় মাথায় চাপে গায়ক হওয়ার ভূত। এবং রাতে ঘুমন্ত বউকে ডেকে সেটা শেয়ার করে। 

পরে ভোলা ময়রার কাছে গিয়ে, গান শিখতে চাইলে, ভোলা ময়রা এটা সেটা নানানটা অজুহাত দেখায় এবং এন্টনী অতো ভেজালে না গিয়ে শেষে ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখে শিখে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এবং বাসাতেই প্রাক্টিস শুরু করে...

যেখানে কুমার বিশ্বজিৎ’র মতো গায়করা স্ট্রাগাল করতে করতে থেরথেরা হয়ে তারপর গায়ক হয় সেখানে এন্টনী সামান্য কিছুক্ষণ চর্চা করে, বিখ্যাত একজন গায়িকার সাথে কবি গানের প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। এবং তাকে তুড়ি মেরে হারিয়ে দেয়। 

এরপর  করোনা ভাইরাসের মতো দ্রুত নাম-ডাক ছড়িয়ে পরে। এবং একের পর এক বিখ্যাত গায়ককে প্রতিযোগীতায় হারাতে থাকে। এভাবেই সিনেমার শেষাংশে চলে আসে। শেষ অংশে এন্টনী তার আইডলের সাথে প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। আর তার বউ নিজের ঘরে পূজোর আয়োজন করে। 

ওদিকে প্রতিযোগীতা, এদিকে পূজো চলতে থাকে। বাড়ি ফাঁকা এন্টনীর বউয়ের সেই পুরনো নিষিদ্ধ ইতিহাস এসে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। তারপরও ধর্মান্ধর মতো এন্টনীর বউ ঘর থেকে পালিয়ে না বেঁচে পূজোর মূর্তির পায়ে মাথা ঠেকিয়ে মরার নিদ্ধান্ত নেয় এবং আগুনের তাপে মারা যায়। আর আমার করা অনুমান ঠিক হয়। কারণ আমি আগেই বুঝতে পারি এই নায়িকা সিনেমার শেষে মারা যাবে। 

সমাপ্ত। 

উত্তম কুমার একজন আসলেই মহান অভিনেতা। তার যে কয়টা সিনেমা দেখেছি। সব কয়টা সিনেমা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই সিনেমাতেও তাঁর চমৎকার অভিনয় ছিলো। এই সিনেমাটা নাকি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ও পেয়েছিলো। তবে...। নাহ্ কিছুনা....

Comments

  1. মজা পাইছি দোস্ত,হাসি পাচ্ছে খুব

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

প্লাস্টিক ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ

গতোকালকে প্লাস্টিক সম্পর্কিত একটা প্রতিবেদন দেখলাম এবং আজকে একটা নিউজ পড়লাম। দুইটা জিনিস দেখে এবং পরে আমি জাস্ট ঘাবড়ে গেলাম। আমরা মানবজাতি কতোটা হুমকি স্বরূপ নিজেদের জন্য, এবং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণীর জন্য... আমরা একটা পলিথিন বা প্লাস্টিকের বোতল খুব তুচ্ছ মনে করে যেখানে সেখানে ফেলে দিচ্ছি। এই প্লাস্টিকগুলো কি হচ্ছে? কোথায় যাচ্ছে? এসব কি কিছুর খবর জানি আমরা? এই প্লাস্টিক প্রথমে কোন খাল বা ড্রেন ধরে চলে যাচ্ছে নদীতে, নদী থেকে সমুদ্রে। আমাদের ব্যবহৃত প্রায় নব্বই শতাংশ প্লাস্টিকের সর্বশেষ ঠিকানা হচ্ছে সমুদ্র। যার কারণে সমুদ্রের প্রাণীগুলোর হচ্ছে অকালমৃত্যু। এই পর্যন্ত তাও ঠিক ছিলো। কিন্তু এই মানুষের ফালানো প্লাস্টিক যখন মানুষের জন্যই হুমকি হচ্ছে যাচ্ছে, তখন তো ঘাবড়ে যাবারই কথা... একটি মার্কিন সংস্থা চেষ্টা চালিয়েছিলো যে সমুদ্র থেকে ৮০ শতাংশ প্লাস্টিক তারা সরিয়ে ফেলবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে- সমুদ্রের চাপে বা বিভিন্ন সময়ে প্লাস্টিক হয়ে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। মাইক্রোপ্লাস্টিক হচ্ছে, প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা। যা সমুদ্র কিংবা নদী থেকে সরিয়ে ফেলা অসম্ভব। আর দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশে ...

#showoff

তিন বছর সম্পর্ক করার পর যখন ওর অন্যখানে বিয়ে হলো। তখন নিজের ভাগ্যের প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো। এমনকি সৃষ্টিকর্তার প্রতি ও অভিমান হয়েছিলো। কেনো তিনি, তাকে আমার ভাগ্যে লিখলেন না। কিন্তু তার বিয়ের পরও যখন কিছু দিন তার সাথে কথা বললাম, তাকে আরও নতুন করে জানলাম, তখন বুঝলাম আমি বোলী হতে হতে বেঁচে গেছি। তার সাথে বিয়ে হলে আমি কখনোই সুখী হতে পারতাম না... দুই বছর আগের কথা। এতো খারাপ সময় যাচ্ছিলো। কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। মিরপুর থেকে চন্দ্রা, চন্দ্রা থেকে মিরপুর ছুটাছুটি করলাম। কতোজনকে রিকোয়েস্ট করলাম, একটা চাকরির জন্য। কেউ দিলো না। ছয়মাস বেকার থেকে, জমানো টাকা পয়সা সব খেয়ে ফেললাম। তখনো ভগ্যের প্রতি খুব রাগ হয়েছিলো। মনে মনে ভাবতাম শালার কি বালের একটা কপাল নিয়া জন্মাইছি। অথচ আল্লাহ্ এখন এতো ভালো রাখছে যেটা কখনো কল্পনা ও করিনি। সেই সময় যেসব চাকরির পেছনে ছুটেছিলাম, সেই চাকরিগুলোর কোন একটা যদি করতাম, তবে সর্বোচ্চ দশ থেকে বারো হাজার টাকা বেতন পাইতাম। অথচ আমি আমার জীবনের সর্বোচ্চ ইনকাম [তেত্রিশ হাজার ছয়’শ] এই মাসে করলাম । টাকাগুলো মায়ের হাতে দেয়ার পর, মা সাত-আটবার গুণেও কনফিউশানে পরে গেলো। এতোবার গু...